Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ছবি
শিরোনাম
ধানের চারা রোপন
বিস্তারিত

বীজ বাছাইঃ

বপনের জন্য পুষ্ট ও সুস্থ বীজ নিশ্চিত করতে হবে।কারণ ভাল বীজ মানে সবল চারা। বিভিন্ন পদ্ধতিতে (হাত বা কুলা দিয়ে, ইউরিয়া মিশ্রিত পানিতে ভিজিয়ে) বীজ বাছাই করা যায়। বীজ বাছাইয়ের একটি ভালো পদ্ধতি হলো-

— দশ লিটার পরিষ্কার পানিতে ৩৭৫ গ্রাম ইউরিয়া সার মেশাতে হবে। এবার ১০ কেজি বীজ ছেড়ে হাত দিয়ে নেড়ে চেড়ে দিতে হবে। বীজ ডুবে নিচে জমা হবে এবং অপুষ্ট, হালকা বীজ ভেসে উঠবে। হাত অথবা চালনি দিয়ে ভাসমান বীজগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। ভারী বীজ নিচ থেকে তুলে নিয়ে পরিষ্কার পানিতে ৩-৪ বার ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে। ইউরিয়া মেশানো পানি সার হিসেবে বীজতলায় ব্যবহার করা যায়।

 

বীজ শোধন ও জাগ দেয়াঃ

মোটামুটি ৮০-৯০% অংকুরোদগম ক্ষমতা সম্পন্ন বাছাইকৃত বীজ দাগমুক্ত ও পরিপুষ্ট হলে সাধারণভাবে শোধন না করলেও চলে। তবে শোধনের জন্য ৫২-৫৫ ডিগ্রি সে. (হাতে সহনীয়) তাপমাত্রায় গরম পানিতে ১৫ মিনিট ডুবিয়ে রাখলে জীবাণুমুক্ত হয়। বীজ যদি দাগযুক্ত হয় এবং বাকানি আক্রমণের আশঙ্কা থাকে তাহলে কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করতে হবে। তিন (৩) গ্রাম ছত্রাকনাশক এক লিটার পানিতে ভালভাবে মিশিয়ে এক কেজি পরিমাণ বীজ পানিতে ডুবিয়ে নাড়াচাড়া করে ১২ ঘন্টা রেখে দিতে হবে। এরপর বীজ পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। এভাবে শোধনকৃত বীজ বাশেঁর টুকরি বা চটের বস্তায় ভরে খড় বা বস্তা দিয়ে চাপা দিয়ে রাখতে হবে। এভাবে জাগ দিলে আউশ ও আমন মৌসুমের জন্য ৪৮ ঘন্টা বা দুই দিন, বোরো মৌসুমে ৭২ ঘন্টা বা তিন দিনে ভাল বীজের অঙ্কুর বের হবে এবং বীজতলায় বপনের উপযুক্ত হবে।

আদর্শ বীজতলা তৈরিঃ

দোঁআশ ও এঁটেল মাটি বীজতলার জন্য ভাল। বীজতলার জমি উর্বর হওয়া প্রয়োজন। যদি জমি অনুর্বর হয় তাহলে প্রতি বর্গমিটার জমিতে দুই কেজি হারে জৈব সার (পচা গোবর বা আবর্জনা) সুন্দরভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। এরপর জমিতে ৫-৬ সেমি পানি দিয়ে দু’তিনটি চাষ ও মাই দিয়ে ৭-১০ দিন রেখে দিতে হবে এবং পানি ভালভাবে আটকিয়ে রাখতে হবে। আগাছা, খড় ইত্যাদি পচে গেলে আবার চাষ ও মই দিয়ে কাদা করে জমি তৈরি করতে হবে। এবার জমির দৈর্ঘ্য বরাবর ৩.৩৩ ফুট (এক মিটার) চওড়া বেড তৈরি করতে হবে। দু’বেডের মাঝে প্রায় ১ ফুট (২৫-৩০ সেমি.) জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে। নির্ধারিত জমির দু’পাশের মাটি দিয়ে বেড তৈরি করা যায়। এরপর বেডের উপরের মাটি বাঁশ বা কাঠের চেপটা লাঠি দিয়ে সমান করতে হবে। বেড তৈরির ৩/৪ ঘন্টা পর বীজ বোনা উচিত। বীজতলা তৈরির জন্য দু’বেডের মাঝে যে নালা তৈরি হয় তা খুবই প্রয়োজন। এ নালা যেমন সেচের কাজে লাগে তেমনি পানি নিষ্কাশন বা প্রয়োজনে সার/ওষুধ ইত্যাদি প্রয়োগ করা সহজ হয়। বাকানি রোগপ্রবণ এলাকায় আবশ্যিকভাবে ছত্রাকনাশক দ্বারা বীজ শোধন করতে হবে।

বীজতলায় বীজ বপনঃ

প্রতি বর্গমিটার বেডে ৮০-১০০ গ্রাম বীজ বুনতে হবে। অঙ্কুরিত বীজ বেডের উপর সমানভাবে বুনে দিতে হবে। বীজ বেডের উপর থাকে বলে পাখিদের নজরে পড়ে। তাই বপনের সময় থেকে ৪/৫ দিন পর্যন্ত পাহারা দিয়ে পাখি তাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে এবং নালা ভর্তি করে পানি রাখতে হবে। (বিইউ ধান ১ এর ক্ষেত্রে বিঘা প্রতি বীজের পরিমাণ ৩ কেজি)।

সাধারণ পরিচর্যাঃ

বীজতলায় সবসময় নালা ভর্তি পানি রাখা উচিত। বীজ গজানোর ৪-৫ দিন পর বেডের উপর ২-৩ সেমি. পানি রাখলে আগাছা ও পাখির আক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বোরো মৌসুমে শীতের জন্য চারার বাড়-বাড়তি ব্যাহত হয়। এ কারণে রাতে বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখলে ঠান্ডাজনিত ক্ষতি থেকে চারা রক্ষা পায় এবং চারার বাড়-বাড়তি ভাল হয়। চারাগাছ হলদে হয়ে গেলে প্রতি বর্গমিটারে ৭ গ্রাম করে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করলেই চলে। ইউরিয়া প্রয়োগের পর চারা সবুজ না হলে গন্ধকের অভাব হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে। তখন প্রতি বর্গমিটারে ১০ গ্রাম করে জিপসাম সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া সারের উপরি প্রয়োগের পর বীজতলায় পানি ধরে রাখা উচিত।

চারা উঠানোঃ

বীজতলায় বেশি করে পানি দিয়ে বেডের মাটি নরম করে নিতে হবে। এমনভাবে চারা উঠাতে হবে যেন চারার কান্ড মুচড়ে বা ভেঙ্গে না যায়। শুকনো খড় ভিজিয়ে নিয়ে বান্ডিল বাঁধতে হবে।

চারা বহনঃ

বীজতলা থেকে রোপণের জন্য চারা বহন করার সময় পাতা ও কান্ড মোড়ানো পরিহার করতে হবে। এজন্য ঝুড়ি বা টুকরিতে সারি করে সাজিয়ে পরিবহন করা উচিত। বস্তাবন্দী করে ধানের চারা কোনক্রমেই বহন করা উচিত নয়।

জমি তৈরি ও চারা রোপনঃ

জমি তৈরির ক্ষেত্রে মাটি নরম ও সমান হওয়া জরুরী। উত্তমভাবে চাষ করলে প্রাথমিভাবে আগাছা নিয়ন্ত্রনে থাকে। তাছাড়া সেচ ও বৃষ্টির পানির অপচয় কম হয়। ভালকরে কাদা করতে পারলে পানি বেশী সময় ধরে আটকে থাকে।

চারার বয়সঃ সাধারণভাবে আউশে ২০-২৫ দিনের, রোপা আমনে ২৫-৩০ দিনের এবং বোরোতে ৩৫-৪৫ দিনের চারা রোপণ করা উচিত।

রোপণ পদ্ধতিঃ

রোপণের সময় জমিতে ছিপছিপে পানি থাকলেই চলে। প্রতি গুছিতে একটি করে সতেজ চারা রোপণ করাই যথেষ্ট। এ হারে রোপণ করলে এক বিঘা জমিতে ১.০৭ থেকে ১.৩৩ কেজি বীজের চারা লাগে। প্রয়োজনে ২-৩ টি পর্যন্ত চারা এক গুছিতে রোপণ করা যেতে পারে। তখন দিগুন হারে বীজের প্রয়োজন হবে। মাটির ২-৩ সেমি. গভীরতায় চারা রোপণ করা উত্তম। সঠিক গভীরতায় চারা রোপণ করলে চারার বাড়-বাড়তি দ্রুত শুরু হয় এবং কুশির সংখ্যা বেড়ে যায়।

সারিতে চারা রোপণ করলে কাংখিত সংখ্যক গুছি থাকে বিধায় ফলন বেশী পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৯-১০ ইঞ্চি (২০-২৫ সেমি) এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব হবে ৬-৮ ইঞ্চি (১৫-২০ সেমি)। চারা রোপণের ৭-১০ দিনের মধ্যে চারা মারা গেলে সেখানে নুতন চারা রোপণ করতে হবে। 

ধানের দ্বি-রোপণ পদ্ধতিঃ

জলাবদ্ধতা, পূর্ববর্তী ফসল বা অন্য কোন কারণে যদি রোপণ বিলম্বিত হয় তবে বেশি বয়সের চারা ব্যবহারের পরিবর্তে দ্বিরোপণ পদ্ধতিতে ধান আবাদ একটি ভাল প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তি রংপুর অঞ্চলে ‘বোলান’ এবং জামালপুর অঞ্চলে ‘গাছি’ নামে পরিচিত। এ পদ্ধতিতে আমন মৌসুমে ২৫-৩০ দিন ও বোরো মৌসুমে ৩৫-৪০ দিন বয়সের চারা উত্তোলন করে অন্য জমিতে ঘন করে ১০ × ১০ সেমি. দূরত্বে সাময়িকভাবে রোপণ করা হয়। ঘনভাবে রোপণকৃত জমির প্রতি দুই সারি হতে একটি সারি সম্পূর্ণভাবে উত্তোলন করে বাকী সারির প্রতি দুই গোছা থেকে একটি করে গোছা উত্তোলন করেত হয়। ফলে তিন-চতুর্থাংশ চারা উঠে যায় এবং বাকী এক চতুর্থাংশ চারা উক্ত জমিতে ২০ × ২০ সেমি. দূরত্বে থেকে যায়। অতএব উত্তোলিত চারা দিয়ে ঘনভাবে রোপিত জমির তিনগুন জমি রোপণ করা সম্ভব। সাধারণত মৌসুমভেদে ২৫-৪০ দিন পর ঘণভাবে রোপণকৃত জমি হতে গোছা উত্তোলন করে মূল জমিতে ২০ × ২০ সেমি. দূরত্বে রোপণ (দ্বিরোপণ) করতে হয়। মৌসুমভেদে দ্বিরোপিত জমির ফসল বেশি বয়সের চারা দিয়ে বিলম্বে রোপিত ফসলের চেয়ে ৭-১০ দিন আগে পাকে; তবে সঠিক সময়ে সঠিক বয়সের চারা দিয়ে রোপিত ফসল হতে ৮-১২ দিন পরে পাকে। অনুরুপভাবে দ্বিরোপিত ধানের ফলন বেশি বয়সের চারা দিয়ে বিলম্বে রোপিত ধানের চেয়ে ১০-১৫% বেশি হয়। যদিও সঠিক সময়ে সঠিক বয়সের চারা দিয়ে রোপিত ধানের চেয়ে ১০-১৫% কম হয়। দ্বিরোপণের ক্ষেত্রে অধিক জীবনকাল সম্পন্ন জাত যেমন, বোরো মৌসুমে ব্রি ধান২৯ এবং আমন মৌসুমে ব্রি ধান৪৯ অধিক উপযোগী। দ্বিরোপণের মাধ্যমে আমন মৌসুমে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে আলোক-সংবেদনশীল জাত রোপণ করেও হেক্টর প্রতি ৩ টনের অধিক ফলন পাওয়া সম্ভব। এ পদ্ধতিতে চারা উচ্চতা বৃদ্ধি পায়, ফলে অগভীর জলাবদ্ধ অবস্থায়ও রোপণ করা সম্ভব হয়। তাছাড়াও এ পদ্ধতিতে মূল জমিতে ফসলের অবস্থানকাল কমানো যায়, যা প্রান্তিক খরা এড়াতে সহায়ক হয়। অধিকন্তু এ পদ্ধতিতে অধিক বয়সের চারার কারণে ফলন হ্রাসের ঝুুঁকি কমানো যায়।

তথ্যসূত্রঃ আধুনিক ধানের চাষ (২০১৫), ব্রি, গাজীপুর

লোগো পদ্ধতিঃ সারিতে চারা রোপণের রুপান্তরিত একটি পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ১০-১২ লাইন পর পর একটি করে লাইন বাদ রেখে চারা রোপণ করতে হবে। এতে করে প্রয়োজনীয় আলো-বাতাস প্রবেশ করাসহ পরিচর্যা কার্যক্রম সহজ হবে। রোগ-পোকার আক্রমণ হবে না বিধায় ফলন বেশী হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ে এ পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে।